শ্রমিকদের নিয়ে সরকারের কোন চিন্তা নেই: শ্রমিক নেতা মসিউদ্দৌলা

Passenger Voice    |    ০৬:১৮ পিএম, ২০২৩-১২-৩০


শ্রমিকদের নিয়ে সরকারের কোন চিন্তা নেই: শ্রমিক নেতা মসিউদ্দৌলা

মোঃ জয়নাল আবেদীন:  আইএলও কনভেনশন ১০২ ও ১২১, মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন ১৮৫৫ এবং উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুর্ঘটনায় আহত-নিহতদের ক্ষতিপূরণের মানদন্ড নির্ধারণ এবং পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

৩০ ডিসেম্বর শনিবার বিকাল সাড়ে তিনটায় নগরীর জামালখান এলাকার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় শ্রমিক নেতা মসিউদ্দৌলা বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা এবং এলাকা থেকে জাহাজ ভাঙা শ্রমিকরা এখানে শ্রম বিক্রি করতে আসে। দূরদূরান্ত হতে শ্রমিকরা পেটের তাগিদে আসে। কিন্তু তার এমন একটি সময় আসে যখন ৬০ বছর পূর্ণ হয়ে যায়। চাকরি জীবনের সময়টাতে এসে বাড়িতে নেওয়ার জন্য হাতেকড়ি কিছুই থাকেনা। এর ফলে তার বাকি জিবন কিভাবে কাটবে এই চিন্তা সরকারের নেই এবং শ্রমিক কর্মচারীরা সচেতন হয়ে উঠেনি। দেশে আইন আছে কিন্তু কোন শ্রমিককে পরিচয়পত্র এবং নিয়োগ না দিয়ে কাজে লাগানো যাবেনা। যদি কোন একজন শ্রমিককে পরিচয়পত্র এবং নিয়োগপত্র ব্যাতিত নিয়োগ দেয়া হয় তাহলে এটি একটি অপরাধ।

যদি কোন মালিক নিয়ম না মেনে নিয়োগ দেন সেক্ষেত্রে পরিদর্শন অধিদপ্তরের ফৌজদারি মামলা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ষড়যন্ত্র বুঝে উঠতে পারছিনা। কেননা হাতেগোনা নামকাওয়াস্তে কয়েকজন মালিকদের নামে শুধু মামলা হয়। দেশে আইন আছে,সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। আর নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন না হলে শাস্তির বিধান রয়েছে।

এছাড়া সেফটির ব্যবস্থা করতে হবে। কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে এবং চিকিৎসার সম্পুর্ন খরচ মালিককে দিতে হবে।মালিকরা শ্রম আইনের বিধান তোয়াক্কা করছেননা। কোম্পানী লাভ করুক তাতে আমাদের সমস্যা নেই কিন্তু ৫% শ্রমিকদের দিতে হবে।আজ পর্যন্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে তার নজীর এখনো পর্যন্ত নেই। এসব বিষয়ে শ্রমিক আবেদন বা দরখাস্ত করলে মূহুর্তে শ্রমিকের চাকরি চলে যায়। আর তাকে কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়না। আমরা চাইনা দেশের কিংবা শিল্পের ক্ষতি হোক। আমরা চাই শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক। আমরা চাই শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক। আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের দাবি মেনে নেন।

এছাড়া জাহাজ ভাঙা শিল্পে দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণের মানদন্ড,কাজের নিরাপত্তা,কর্ম পরিবেশ এবং চাকরি শেষে শ্রমিকদের খালি হাতে যেতে না হয়।জাহাজ ভাঙা শিল্পে ৪০ বছরে ১২২ জন শ্রমিক জীবন দিয়েছেন। তাদের জীবনের বিনিময়ে জাহাজভাঙা শিল্পের বিকাশ। জাহাজভাঙা শিল্পের কারণে অনেকেই বিদেশে লক্ষ লক্ষ টাকা পাচার করেছেন এবং তাদের সন্তানেরা দেশের বাইরে পড়াশোনা করেন। জাহাজ ভাঙার মালিকরা একটা ১ টি জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে ৫ টির মালিক হয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। কোন ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশকে নিরাপদ করা হয়নি। এ বছরে ৭ জন শ্রমিক মারা গেছে এবং অনেক শ্রমিক পঙ্গু হয়েছেন। সে সমস্ত শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি।

এছাড়া ২০১৮ সালে ৫ বছরের জন্য ১৬ হাজার টাকা শ্রমিকের মজুরী নির্ধারণ করা হয়েছিল।কিন্তু ৫ বছর পেরিয়ে আরেকটি প্রস্তাবের সময় এসেছে কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি।একজন শ্রমিকের মজুরী ধরা হয়েছে ৩০০ টাকা যা দিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে। আয়ের এবং সম্পদের এত বৈষম্যের কারণে একটা দেশ উন্নত হতে পারেনা। বিএসবি হাসপাতাল শ্রমিকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। বিনা পয়সায় সেখানে তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।শ্রমিকদের অধিকার এবং কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।শ্রম আইনে যে ন্যায্য দাবি রয়েছে সেগুলো অতি সত্বর বাস্তবায়ন করতে হবে।

দুনিয়ার মজদুর এক হও প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাহাজ ভাঙা সেফটি কমিটির আয়োজনে এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ বিলস এর সহযোগিতায় চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও সমাবেশে এসব বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতারা।